খুনিদের ভয়ে এক অসহায় কিশোরীর আকুতি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৫৪ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
‘একটি বাড়িতে আমি একা একজন মানুষ খুনিদের ভয়ে থাকতে পারছি না। আজকে একজনের বাড়ি, কালকে আরেকজনের বাড়িতে থাকতে থাকতে আমার জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। একদিকে মায়ের লাশ অন্যদিকে মারাত্মক আহত বোনের চিৎকার আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সন্ধ্যা হলে সকল মানুষ আপন আপন ঠিকানায় ফিরে। কিন্তু সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আমার অসহায়ত্ব ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠে।’ এইভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের উখিয়া পশ্চিম পালংখালী এলাকার রাহমিনা মমতাজ প্রিয়া নামের এক নারী।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন তিনি।
ভুক্তভোগী প্রিয়া পশ্চিম পালংখালীতে ইউসুফ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া লুলু আল মরজানের কন্যা।
জীবনের নিরাপত্তা ও মায়ের হত্যার ন্যায় বিচার দাববি করে প্রিয়া বলেন, ‘এ বছরের ৪ মে আমার মাকে নৃশংসভাবে খুন করে খুনি ইউসুফ, শামীম, সেলিম এবং তাদের পিতা জাহাঙ্গীর। সেসময় আমার বড় বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার আঘাত গুরুতর হওয়ায় এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তিনি। এর আগে ১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর একইভাবে হত্যা করে ইউসুফের পিতা, চাচা, ফুফু এবং ফুফা মিলে আমার নানাকেও।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মায়ের খুনের ঘটনার পর গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হলে পুলিশ প্রশাসন খুনি জাহাঙ্গীর এবং সেলিমকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মামলার তদন্ত কার্যক্রমে ধীরগতি এবং প্রধান আসামি ইউছুফসহ অন্যান্য আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় খুনির পরিবার প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকিতে আমি এবং আমার মেজবোন বাড়িতে থাকতে পারছি না। তারা আমার মামা-খালা এবং খালাতো ভাই-বোনদের নানা অজুহাতে হয়রানি করে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যমে পুনরায় হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এদিকে যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে মামলা ততই পুরনো হচ্ছে। প্রশাসন ও সমাজ কর্মীরা ধীরে ধীরে খুনিদের পক্ষ নিচ্ছে বলে মনে করছি আমি। আমার মায়ের খুনির অন্যতম সহযোগীরাও প্রকাশ্য ঘুরাফেরা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, যে জায়গার কারণে আমার মাকে হত্যা করা হয়েছে সে জায়গায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা ছিল। আর সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বর্তমানে তারা বসবাস করছে। আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পুলিশ প্রশাসনকে ফোনে জানালে কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। রাষ্ট্রের কারও কাছ থেকে আমি কোনো প্রকার নূন্যতম সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই মুহূর্তে কাউকে পাচ্ছি না।
প্রিয়া প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে বলেন, ‘এত বড় পৃথিবীতে আমার এক টুকরো নিরাপদ জায়গা নাই। আমি আমার মায়ের খুনি ও সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি এই পৃথিবীতে সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে বাঁচতে চাই। আমার মায়ের আত্মার শান্তি কামনায় আপনাদের দোয়া চাই।’
উল্লেখ্য, খুনি ইউসুফ অর্ধ ডজন ডাকাতি মামলা, অস্ত্র মামলা, প্রশাসনের অস্ত্র ছিনতাই মামলা এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবি হোছন গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।