গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের কদর ততোই বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে গাজীপুর মহানগরী শিল্পাঞ্চল সমৃদ্ধ হওয়ায় ভোটের মাঠে পোশাকশ্রমিকরা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় দুই সহস্রাধিক পোশাক কারখানা আছে। এছাড়া টঙ্গী এবং কোনাবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) দুটি শিল্পনগরী রয়েছে। এর বাইরে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, ভোগড়া, কোনাবাড়ি, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানীয়, টেক্সটাইল, কম্পোজিট, জুতা, যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ধরনের ভারি শিল্পকারখানা আছে। শ্রমিকদের বেশির ভাগের বাড়ি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন উপজেলায়। তবে অনেকে গাজীপুরে ভোটার হয়েছেন।

গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক ভোটার বিভিন্ন গার্মেন্টস ও কারখানার শ্রমিক। তাই শ্রমিকরা নির্বাচনে জয়পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন প্রার্থীরা। এসব ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে টানতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদে জয়পরাজয় নির্ধারণে শ্রমিকদের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট ভোটারের মধ্যে ৪০ শতাংশ স্থানীয় ভোটার থাকলেও ভাসমান ভোটার আছে প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ। ভাসমান ভোটারদের অধিকাংশই বিভিন্ন পেশাজীবী। এর মধ্যে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। কাজকর্মের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এসব মানুষ এখানেই বসতি গড়ে তোলার ফলে এদের সংখ্যা একটু বেশি। তবে নির্বাচনে শ্রমিকদের ভোট যার বাক্সে বেশি পড়বে তিনিই মেয়র নির্বাচিত হবেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় মো. কফিল উদ্দিন বলেন, গাজীপুরে স্থানীয়দের চেয়ে ভাসমান পেশাজীবী ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রায় ৫ লাখের মতো ভাসমান ও শ্রমিক ভোটার আছেন। এরমধ্যে প্রায় চার লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক। সিটি নির্বাচনে শ্রমিকদের এ ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ভোট যেদিকে যাবে সেদিকের পাল্লাই ভারি হবে। ফলে ভোটের মাঠে কারখানার শ্রমিকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে

তিনি আরো বলেন, গাজীপুর বর্তমানে শ্রমিক অধ্যুষিত একটি এলাকা। নির্বাচনের জয়পরাজয়ে শ্রমিকদের ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর। তবে শ্রমিকরা তো ভাসমান তাই চাকরির সুবাদে তারা অন্যত্র চলে গেছে এমন কিছু ভোটও আছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে পারলে আরো কিছু ভোট বাড়বে।

সিটি করপোরেশনের ১৩, ১৪ ও ১৫ সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী রুমানা রহমান বলেন, অনেক শ্রমিক ভোটার আছে যাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ তারা কর্মস্থলে যাতায়াতের সুবিধার্থে কাছাকাছি এলাকায় ভাড়া থাকেন। কর্মস্থল বদলে গেলে তাদের বসবাসের এলাকাও বদলে যায়। এসব ভোটারদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তিনি আরো বলেন, গাজীপুরে স্থানীয় ভোটার আছে। তবে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর জয় অনেকটাই নির্ভর করছে শ্রমিকদের ভোটের ওপর।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমতউল্লা খান বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব। বর্তমান সরকার পোশাক শ্রমিকসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়িয়েছে। নতুন করে শ্রমিকদের বেতনভাতা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। সরকার শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিতের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় শ্রমিকদের বিপদে আপদে পাশে থাকেন। তাই শ্রমিকদের ভোট আমি প্রত্যাশা করতেই পারি।

গাজীপুর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি শিল্পীনগরী এখানে ৫৩২৬ টি ছোট বড় কারখানা রয়েছে, পোশাক শ্রমিকদের সুবিধার জন্য অনেক কিছুই মাথায় রয়েছে যে অসুবিধাগুলো তারা সম্মুখীন হন সেগুলোই চিহ্নিত করে কাজ করা হবে। এবং তাদের বাচ্চাদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি জুনে একটি করে ডে কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হবে,তারা যাতে স্বল্প মূল্যে সেবা পেতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে, সরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার সবার সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তারা যেন সুলভমূল্যে চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি মেয়র থাকা অবস্থায় এবং আগে পরে সব সময় শ্রমিকদের পাশে থেকেছি। কোনো কারখানার মালিক বেতন দিতে না পারলে আমি শ্রমিক ও মালিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করেছি। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সব সময় তাদের পাশে ছিলাম ও আছি। তাই আমি শ্রমিক ভাইবোনদের কাছে আমার মায়ের জন্য ভোট প্রত্যাশা করছি।

জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, শিল্প উদ্দেশ্যে এই গাজীপুরকে আরো আধুনিক শহর হিসেবে রূপান্তর করতে হবে এবং আমরা নির্বাচিত হলে শিল্প দূষণের ফলে নদীগুলো যে মরে গেছে সেগুলোকে উদ্ধার করব এবং শিল্প বান্ধব একটি নগরী গড়ে তুলবো। এবং শিল্প শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে ,যাতে তারা অল্প খরচে থাকতে পারেন সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য এবং তাদের ছেলে মেয়ের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা প্রসারিত করা হবে আমি গাজীপুরের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল কলেজ মসজিদ মাদ্রাসা উন্নয়ন করেছি অতএব উন্নয়নের দিকে আমি সবচেয়ে এগিয়ে থাকবো আশা রাখি।

ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশ মেয়র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন গাজীপুর দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প এলাকা ফলে গাজীপুরে বেকারত্ব থাকার কোনো কারণ নাই। মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে গাজীপুরে কোনো চাকরির ক্ষেত্রে গাজীপুরের অধিবাসী ও ভোটাররাই প্রাধান্য পাবে। শিল্প কলকারখানার সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কোন ধরনের লোক বল দরকার হয় ,তা চিহ্নিত করে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। শ্রমিকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করা হবে এবং স্বতন্ত্র হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে নারী শ্রমিকদের সন্তানদের দেখভাল করা ও পড়াশোনা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হবে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহানুর রনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে প্রাধান্য দেয়া হবে খেটে খাওয়া মানুষ ও পোশাক কারখানার শ্রমিকদের তারা যাতে সুন্দরভাবে চলতে চলতে পারে, সেদিকে সব সময়ই আমাদের নজর থাকবে।

২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। এদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন ও নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৮ জন ভোটার আছেন।

নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষ থাকবে। এবারই প্রথম এ সিটিতে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। প্রতিটি কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে সিসি ক্যামেরা। এর আগে ২০১৮ সালে জেলা শহরের ছয়টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছিল।