মিঠাপুকুরে ২ লাখের বিপরীতে ৬৩ লক্ষ টাকার মামলা!

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রংপুরের মিঠাপুকুরে ৯টি মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে ৬৩ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের। সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করতে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিপরীতে ৬৩ লক্ষ টাকার মামলা করা হয়েছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১৬ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের মরাদপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম রীতিমত সুদের দোকান খুলে বসেছেন। নামমাত্র টাকা লেনদেন করে ফাঁকা চেক হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা স্বরুপ বিভিন্ন গল্প সাজিয়ে এন আই আ্যক্টে একেকটি পরিবারকে সর্বশান্ত করেছেন ।
মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে নয় মাস আগে বিপদে পরে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন শিববাজারের আনারুল হক। তিনি বলেন, পরিবারে অভাব অনটনের চাপে সময়মত শোধ করতে পারি নাই।আমার নামে ৫ লাখ টাকার মামলা দিয়েছে।
লাট কৃষ্ণপুর এলাকার আব্দুল মাবুদ মিয়াকে অর্থ আত্মসাতের ১০ লক্ষ টাকার মামলা এবং তার স্ত্রী ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে ১৫ লক্ষ টাকার মামলা করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, শঠিবাড়ি ইউনিয়ন ব্যাংক এ নিয়ে যেয়ে হিসাব নাম্বার খুলে কৌশলে চেক বই হাতিয়ে নিয়ে মামলাটি করেন মূলত ১ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন তিনি।
ইমাদপুর মসজিদপাড়া এলাকার সাবিনা বেগম তার দুই মেয়ে সুরাইয়া ইসলাম ও সানজানা ইসলামের বিরুদ্ধে তিন লক্ষ টাকার মামলা করেন দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুল। তার স্বামী শহীদুল ইসলাম জানান, ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার পরিশোধ করেও মামলা দিয়ে চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন।
পূর্ব মুরাদপুরের শাহজাহানের বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকার মামলা করা হয়। পক্ষান্তরে তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০ শতাংশ জমি নামে করে দেওয়ার পরও তার নামে মামলা দিয়েছে।
একই এলাকার ইয়াকুব আলী ও তার ছেলে আউয়াল মিয়ার নামে ৫ লক্ষ টাকা অর্থ আত্মসাতের মামলার বিষয়ে তারা বলেন, অভাবের তারনায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।
রামরায়ের পাড়ার জয়দুল হক ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকার মামলা করা হয়। জাহানারা বলেন, আমরা ১ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার পরও মামলা দিয়েছে। এই টাকার চাপে আমার স্বামী স্টোক করে মারা গেছেন। জুলুম করে তার সই নেওয়ার কারণে স্টোক করে তিন দিন পরে মারা যান তিনি।
বুজরুক নুরপুর এলাকার রোস্তম আলী ও তার স্ত্রী রিনু বেগমের নামে ৫ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মেয়ে রুমানা বলেন, আমরা মা মেয়ে সুদারু আনোয়ারুলের কাছে টাকার জন্য গিয়েছিলাম ফাঁকা চেকে সই নিয়ে পরের দিন টাকা দেওয়ার কথা বললেও না দিয়ে মামলা করেন। আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত ভিডিও রয়েছে।
খোর্দ্দ শেরপুরের জয়দাল মিয়া তার বিরুদ্ধে ২ টি মামলায় ৮ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার মামলার ব্যাপারে জানান, মূলত ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। চেক ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও না দিয়ে মামলা করেন।
মামলাবাজ আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও তার ছেলে আরিফ হাসানকে (২৩) দিয়ে পূর্ব মুরাদপুর এলাকার আব্দুল হাসেমের বিরুদ্ধে ৬ লক্ষ টাকার মামলা করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদের ওপর নেয় এবং আমার কাছে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নেয়। ইতোমধ্যে আমি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি তবুও মামলা দিয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আনায়ারুল ইসলাম একজন সমাজ স্বীকৃত সুদখোর। তার কাছে সুদের টাকা নেওয়ার পূর্ব শর্ত হলো সইযুক্ত ফাঁকা স্ট্যাম্প এবং সইযুক্ত ফাঁকা চেক। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে মামলার রোষানলে পরে অর্ধ-শতাধিক পরিবার সর্বশান্ত হওয়ার সত্যতা মিলেছে।
রংপুর জেলা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত মিঠাপুকুরে সকল মামলা দায়ের করেন মামলাবাজ আনোয়ারুল। যার মামলা নং সি.আর ৬৪/২২,৭৮/২২,৬২৮/২১,৬০২/২১,২৫৪/২১,৭১/২২,৬৫/২২।
এ ব্যাপারে দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ব্ক্তব্য পাওয়া যায়নি।