চলে গেলেন কমরেড মন্তোষ কুমার পাল

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:৩১ পিএম

মন্তোষ কুমার পাল। ছবি: ভোরের কাগজ
পশ্চিম মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী মন্তোষ কুমার পাল প্রায় নব্বই বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন।
শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাতিজা শিক্ষক পংকজ পাল।
তেরশ্রীর (বাহাদুরপুর) স্বর্গীয় গজেন্দ্র কুমার পাল এর বড়ছেলে মন্তোষ কুমার পাল শিক্ষকতাকে ভালোবেসে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ তেরশ্রী কে. এন. ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক ছিলেন।
প্রগতিশীল, পরোপকারী, দক্ষ সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হিসেবে এলাকাসহ মানিকগঞ্জ জেলায় তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, শিশুকিশোরদের ব্যক্তিত্ব ও মেধাবিকাশে অবদান রেখেছেন সব সময়।
তেরশ্রীর সকল প্রগতিশীল কর্মকাণ্ড, আন্দোলন ও সংগ্রামের সঙ্গে তিনি নিজেকে সর্বদা ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ডা. এম এন নন্দী, প্রমথনাথ নন্দীর যোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন তিনি। ভাষা সৈনিক আ. হাকিম, ভাষা সৈনিক ওয়াজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রহমান ঠাকুর, ডা. মোবারক আলী, বিজয় চন্দ্র শীলসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ব্যক্তির সঙ্গে তার ছিল আত্মার সম্পর্ক।
দিনের পর দিন এদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মুক্তি ও উন্নয়নের কথা ভাবতেন তিনি। প্রমিত বাংলা উচ্চারণের জন্য তার খ্যাতি ছিল।
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিনামূল্যে ডাক্তারি সেবা দিয়ে গেছেন জনসাধারণকে। এর জন্য বিভিন্ন কোর্সও করেছিলেন তিনি। তরুণদের সৃজনশীল কাজে উদ্ধুদ্ধ করতেন। নিয়মিত বই ও পত্রিকা পড়তেন এবং অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করতেন। তেরশ্রী গণকেন্দ্র পাঠাগার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তার।
তিনি ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন। ছিলেন খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষক। দীর্ঘদিন ফুটবল খেলার রেফারি ছিলেন। নাট্যমোদীও ছিলেন। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে তিনি মঞ্চ নাটক পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন। এক সময় খেলাঘরও করতেন।
তেরশ্রী খেলাধুলার বিকাশে বিভিন্ন ক্লাবেও যুক্ত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তেরশ্রী গণহত্যায় নিহত শহীদের স্মরণে প্রথম ‘তেরশ্রী শহীদ স্মরণ কমিটির’ কোষাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।
তেরশ্রী গণকেন্দ্র পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি, শেষ জীবনে এলাকাবাসীর অনুরোধে তেরশ্রী সার্বজনীন হরিসভা কমিটির সভাপতিও ছিলেন।
শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরের পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থানের পর সন্তানদের অনুরোধে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছিলেন। তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মানিকগঞ্জ জেলা সংসদ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।