×

বরিশাল

দুষ্টামি একজনের, খেসারত অন্যজনের

Icon

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম

দুষ্টামি একজনের, খেসারত অন্যজনের

ছবি: সংগৃহীত

   

এক বন্ধুর সঙ্গে অপর বন্ধুর দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে, তেমনি খেসারাতটাও দিতে হল ভয়ঙ্কর কায়দায়। মাঝখানে স্বজনকে ছাড়াতে গিয়ে ভিকটিম হলেন গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন শরীফ। পেলেন দলের কঠিন সিদ্ধান্ত। হারালেন পৌর বিএনপির আহ্বায়কের পদ। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের। 

জানা গেছে, ওই বন্দরের ফ্ল্যাক্সিলোড ও বিকাশ ব্যবসায়ী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের একেএম জামিল সিকদার ওরফে মিঠু সিকদার (৪৬)। একই সঙ্গে তিনি গৌরনদী পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই বন্দরে একই ব্যবসা করতেন উপজেলার শাহাজিরা গ্রামের মো. নাজমুল হাসান মিঠু খান (৪৬)। তিনি রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী। প্রায় ২ বছর হল মিঠু খান তার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে। ফলে এক সময় ব্যবসায়িক যোগাযোগ থাকলেও দীর্ঘ প্রায় দুই বছর তাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিলো না। 

ঘটনার ভূক্তভোগী একেএম জামিল সিকদার ওরফে মিঠু সিকদার জানান, গত ১৮ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে ০১৭১৩৬৮৫২০৮ নম্বরের একটি অজ্ঞাতনামা মোবাইল ফোন থেকে আমার ০১৭১৫৫৭৫৫১৯১ নম্বরের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বলেন, আপনি আর্মি ক্যাম্পে আসেন। আমি তখন ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে বললাম আমি কি কাম করছি যে, আর্মি ক্যাম্পে আসবো। স্যার আমিতো ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানদারী করে খাই। আসরের নামাজ পড়ে কেবল আসছি, এখন মাগরিবের নামাজ হবে। আমি এখন সন্ধ্যার সময় কিভাবে যাবো, আমি কালকে সকালে আসবো। আজকে হাটবার দিন, শুক্রবার আমাদের এখানে হাট হয়। এ কথা তাকে বলার পরে সে আমাকে বলে এ ব্যাটা তোর দোকানটাই বড়, দেখা কইরা যা। এ কথা শোনার পর আমি আমার বড়বোন ও ভগ্নিপতিকে নিয়ে ওইদিন রাতে উপজেলার কসবা গ্রামস্থ সেনা ক্যাম্পে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি তারা আমাকে ফোনে ডাকেনি। তখন অজ্ঞাতনামা ০১৭১৩৬৮৫২০৮ নম্বরটি সেনা ক্যাম্পে দেয়া হলে ক্যাম্পের একজন সেনা সার্জেন্ট ওই অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বরে কল করে ওই ব্যক্তিকে সেনা ক্যাম্পে আসতে বলেন। ফোনে তখন ওই ব্যাক্তি সেনা সার্জেন্টের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এর কিছুক্ষন পর অজ্ঞাতনামা ওই নম্বর থেকে আমাকে কল করে মো. নাজমুল হাসান মিঠু খান নিজের পরিচয় দিয়ে আমাকে বলে ভাই আমি তো আপনার সঙ্গে একটু দুষ্টামি করেছি। আপনি এটার জন্য সেনা ক্যাম্পে বিচার দিলেন। এখন তো আমি বিপদে পড়ে গেলাম, আমাকে সেনা ক্যাম্পে দেখা করতে ডাকে। এই বলে সে আমার কাছে, আমার স্ত্রী ও বোনের কাছে ক্ষমা চায়। আমরা তখন তাকে ক্ষমা করে দেই। 

আরো পড়ুন: বিএনপির মিছিলের সামনে ‘জয়-বাংলা’ স্লোগান, এরপর যা ঘটলো

গত ২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিঠু খান ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে সেনা ক্যাম্পে যায়। এ সময় তাকে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। তখন নিজেকে ছাড়াতে সে আমাকে ফোন করে সেনা ক্যাম্পে যেতে বলে। আমি রাজি হইনি। এরপর গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন শরীফের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আটক মিঠু খানের খালাতো ভাই সজিব আমার কাছে এসে মিঠু খানকে ক্যাম্প থেকে ছাড়িয়ে আনতে যেতে অনুরোধ করে। তখন আমি সজিবকে সঙ্গে নিয়ে মিঠু খানকে ছাড়িয়ে আনতে সেনা ক্যাম্পে যাই এবং তাকে ছেড়ে দিতে সার্জেন্টকে অনুরোধ করি। সার্জেন্ট এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও সজিব শরীফকে মারধর করে এবং সজিবকে ক্যাম্পে আটকে রাখে। 

সজিব শরীফ সেনা ক্যাম্পে আটক এ খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন শরীফ ও তার চাচাতো ভাই পৌর বিএনপির সদস্য মো. ফরহাদ শরীফ। তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে সজিবকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাদেরকেও আটক করে। এরপর সেনা কর্মকর্তারা একটি এজাহার লিখে তাতে আমার স্বাক্ষর নিয়ে জাকির শরীফ, ফরহাদ শরীফ, সজিব শরীফ ও মো. নাজমুল হাসান মিঠু খানকে গৌরনদী থানা পুলিশের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করে। পরদিন সকালে আদালতে গিয়ে আমি জাকির শরীফসহ সবাইকে ছাড়িয়ে আনি। 

ভুক্তভোগী একেএম জামিল সিকদার ওরফে মিঠু সিকদার বলেন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির শরীফের সঙ্গে আমার কোন ঝামেলা নেই। উনি একজন ভাল মানুষ, শুনেছি ঘটনা যাকে নিয়ে সেই নাজমুল হাসান মিঠু একজন নেশাখোর। তাই সে এমন পাগলামীটা করেছে। এ ঘটনায় আমি কোন মামলা করতে চাই নাই। তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আমি বারবার সেনা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি। তারা আমাকে বলেছে তুই এভাবে করলে তোকে মেরে তোর হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙ্গে ফেলব। ভয়ে আমি আর কথা বলিনি। এজাহারে জাকির শরীফসহ গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে আমাকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। তারা এজাহার লিখে এনে পড়ে শুনিয়ে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলেছে আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছি। আসলে চাঁদাবাজীর কোন ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটেনি।

অপর দিকে এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগের সুত্র ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ ঘটনার সংবাদ প্রচারিত হলে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন শরীফ, সদস্য ফরহাদ শরীফসহ তিন জনকে দল থেকে বহিস্কার করে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় বহিস্কৃত তৃতীয় ব্যক্তিটি হলেন, বিএনপি কর্মী নাজমুল হাসান মিঠু। তার দ্বারাই ঘটনার সূত্রপাত। 

আরো পড়ুন: স্লোগান দিতে গিয়ে যুবদল নেতার মৃত্যু

ঘটনার সুত্রপাত যার মোবাইল ফোন কলকে কেন্দ্র করে, সেই নাজমুল হাসান মিঠু জানান, আমি আসলে বিএনপির লোক নই। আমি রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী। বর্তমানে প্রিন্টিং ব্যবসায় নিয়োজিত। বিএনপির প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি হতবাক হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগের লোক আর আমাকে বহিস্কার করে বিএনপি। এটা কি করে সম্ভব। তিনি প্রশ্ন রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস কোন প্রকার যাচাই বাছাই না করে এমন হাস্যকর কাজটি কিভাবে করল।

সেনা ক্যাম্পে আটক ও দল থেকে বহিস্কার হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৌরনদী পৌর বিএনপির বহিষ্কৃত আহ্বায়ক জাকির হোসেন শরীফ বলেন, সারা জীবন এ দলের জন্য শ্রম ঘাম ও রক্ত ঝড়িয়েছি, অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছি, একাধিকবার জেল খেটেছি, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ৫ বছর পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলাম। কোনদিন আমার বিরুদ্ধে কেউ সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজীর অভিযোগ আনতে পারেনি। একটি আওয়ামী লীগের ছেলের পাগলামীর কারণে সেনা ক্যাম্পে আটক ভাতিজাকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চক্রান্তে আমার উপর সন্ত্রাস সৃষ্টি ও চাঁদাবাজীর কলঙ্ক দেয়া হল। দল সেটি ভালভাবে যাচাই-বাছাই না করে প্রতিপক্ষের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমাকে বহিস্কার করল। এ দুঃখ, এ কষ্ট রাখার যায়গা নেই। এখনো আমি দলের প্রতি অনুগত। আশা করছি দল ঘটনা তদন্ত করে এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে।

এ বহিস্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন বলেন, তাকে বিএনপি বহিস্কার করেছে। সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছিল এবং বিএনপির লোকের সঙ্গে ছিল তারে তো এ জন্য আমরা কর্মী বলছি।

বিএনপি তার কর্মী শনাক্তে ভুল করেছে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই, আমরা শনাক্ত করে বহিস্কার করেছি, আমিতো বহিস্কার করিনি, আমাদের দল বহিস্কার করেছে বলে কলটি কেটে দেন। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App