সোহেল তাজ বললেন, দুই হাতে টাকা বানাতে বলতেন শেখ হাসিনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম

শেখ হাসিনার সঙ্গে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান। তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে বরাবরই পরিচিত ছিলেন তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনমুখী বক্তব্য ও বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে তার দৃঢ় অবস্থানের জন্য। নানান সময়ে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা বলে তিনি তরুণদের মনোযোগ কেড়েছেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সেহেল তাজ নিজের পদত্যাগের পেছনের কারণ ও তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেছেন।
সোহেল তাজ রাজনীতি থেকে পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগের ভেতরের বাস্তবতা নিয়ে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সোহেল তাজ তুলে ধরেছেন তার অভিজ্ঞতা ও ভাবনা।
সোহেল তাজ বলেন, আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলাম অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে। আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সেখানেই আমার সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে ভেতর থেকে একটা তাগিদ অনুভব করলাম, দেশের জন্য কিছু করা দরকার। সেই তাগিদ থেকেই দেশে ফিরে আসি এবং অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হই। পরবর্তীতে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিই।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগের বড় পরাজয় হলো, তখনো আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হই। মাত্র ৫৮টি সিটে জয়লাভ করা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের মধ্যে আমিও ছিলাম একজন। বিরোধী দলে থেকে অনেক সংগ্রাম করেছি, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি এবং পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছি। এক-এগারোর পর ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। এটি আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল কারণ এটি ১৯৭১ সালে যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তার প্রতিফলন ছিল বলে আমার বিশ্বাস।
সাবেক এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় আমি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমার লক্ষ্য ছিল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং পুলিশ বাহিনীকে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত করা। আমি চেয়েছিলাম পুলিশের মধ্যে এক ধরনের সংস্কার আনতে, যাতে এই বাহিনী জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। কিন্তু কিছু অদৃশ্য শক্তি এসে আমার কাজে বাধা দিতে শুরু করে।
সাবেক এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একদিন আমি একটি মিটিংয়ে বলেছিলাম, ‘আজ থেকে বদলি বাণিজ্য বন্ধ!’ এবং পুলিশ সংস্কারের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমি উপলব্ধি করলাম, আমার পথে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নানা ধরনের অদৃশ্য চাপ আসছিল, যা আমার স্বপ্নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
জনপ্রিয় এ রাজনীতিবিদ বলেন, আমি শেখ হাসিনাকে সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। কিন্তু অনেকে আমাকে বারবার বলেছেন, শেখ হাসিনা কখনো তাজউদ্দীন আহমদের ছেলেকে ভালো চোখে দেখবেন না। কিন্তু আমি এসব কথায় কান দিইনি। তবে একদিন আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘বিএনপি অনেক টাকা বানিয়েছে। এখন আমাদেরও দুই হাতে টাকা বানাতে হবে।’ এই কথা শোনার পর তার প্রতি আমার আর কোনো শ্রদ্ধা থাকেনি। এই বক্তব্য আমাকে ভীষণভাবে হতাশ করেছিল।
সোহেল তাজ বলেন, পদত্যাগের আরো একটি কারণ ছিল। আর তা হল, আমি যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে চাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম আমার কোনো নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। পরে আমি জানতে পারি, আমার অধীনস্থ সকল কর্মকর্তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কোনো নির্দেশ পালন করতে হবে না। এরকম অবস্থায় আমার পক্ষে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল, তাই আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।
আরো পড়ুন: টাইমের কভারেই কপাল পুড়েছে শেখ হাসিনার!
তিনি আরো বলেন, আমি রাজনীতিতে আসার সময় বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। দেশের জন্য কাজ করতে চাইলেও আমার সামনে যেসব বাধা তৈরি করা হয়েছিল, তা অতিক্রম করা সম্ভব ছিল না। তাই আমি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।