দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা, সওলে নাটকীয় পরিস্থিতি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৯ এএম

দক্ষিণ কোরিয়ার সাময়িক বরখাস্ত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইউল। ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার সাময়িক বরখাস্ত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইউলকে দেশটির তদন্তকারীরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানোয় সওলে পুনরায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে দেশটির আদালত ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ইউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং বিদ্রোহ উসকে দিয়েছেন।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে হাজির হতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যার কারণে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
যদিও প্রেসিডেন্টের আইনজীবী এই গ্রেপ্তারি আদেশকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে, এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টির নেতাকর্মীরা তদন্তকারীদের অযৌক্তিক গ্রেপ্তার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশটির দুর্নীতিবিরোধী করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস (সিআইও) মূলত প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিদ্রোহ উসকে দেয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে।
সওলে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টায় ৬৪ বছর বয়সী ইউনকে গ্রেপ্তারের তৎপরতা শুরু করেন তারা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইয়োনহাপ জানায়, এই টিমে ১২০ জন পুলিশ সদস্য এবং সিআইও- এর ৩০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের মূল কম্পাউন্ডে প্রবেশ করেছেন এবং বাকি সদস্যরা বাইরে পাহারা দিচ্ছেন।
এর আগে, প্রেসিডেন্টের বাসভবনের পথে থাকা ফুটপাত বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অনেকগুলো পুলিশ ভ্যান সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তবে গ্রেপ্তার ঠেকাতে তদন্ত দলটিকে বাধা দিয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনী। তারা এর আগেও ইউনের অফিস এবং বাসভবনে তল্লাশি চালানোর প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছিল।
আরো পড়ুন : দক্ষিণ কোরিয়ার সেই বিমান সংস্থায় পুলিশের হানা
প্রেসিডেন্ট ইউনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং তার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হলেও তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস) এবং সওল শহরের নিরাপত্তা রক্ষাকারী সামরিক ইউনিট সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তারা শুরু থেকেই ইউনকে গ্রেপ্তারে বাধা দিতে শক্তি প্রয়োগ করে আসছে।
এমন অবস্থায় ইউনকে গ্রেপ্তারে বাধা না দিতে বরং সহযোগিতা করতে ইউনের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধী দলের নেতারা।
বিরোধী দলের এমপি পার্ক চ্যান-ডে সতর্ক করে বলেছেন, কেউ যদি গ্রেপ্তারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাকে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা এবং বিদ্রোহে সহযোগিতার অভিযোগে শাস্তি দেয়া হবে।
এদিকে ইউনের আইনজীবী দলও তার বাসভবনের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করেছে। তার আইনজীবী ইউন গ্যাপ-গুন আগেই গ্রেপ্তারের এই প্রচেষ্টাকে অবৈধ এবং অকার্যকর উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
ইউনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ ৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত থাকায়, এই সময়ের মধ্যেই অবশ্যই ইউনকে গ্রেপ্তার করতে হবে তদন্ত কর্মকর্তাদের। যদি তা না হয় তবে তাদের আবার নতুন ওয়ারেন্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
ইউনের সমর্থনে বিক্ষোভ
এদিকে ইউনের অনেক সমর্থক কয়েক দিন ধরে তার বাসভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে আছেন। ইউনের গ্রেপ্তার ঠেকাতে যা করা দরকার তাই করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
শুক্রবার সকালেও সূর্য ওঠার আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা এবং প্ল্যাকার্ড হাতে অসংখ্য মানুষ কম্পাউন্ডের গেটের সামনে জড়ো হতে থাকে। তদন্ত কর্মকর্তারা যখন ইউনের দরজার দিকে এগিয়ে যান, তারা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন এবং তাকে গ্রেপ্তারে বাধা দেয়ার অঙ্গীকার করে।
সাময়িকভাবে মার্শাল ল' ঘোষণার চেষ্টা চালানোয় গত ৩রা ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট ইউনকে অভিশংসন করে। পরে ১৪ই ডিসেম্বর দেশটির আইনপ্রণেতারা তাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিলে তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে সাংবিধানিক আদালত অভিশংসনের এই আদেশ বহাল রাখলেই কেবল তাকে পদচ্যুত করা সম্ভব।
ইউন দুই সপ্তাহ ধরে তদন্তকারীদের তলব উপেক্ষা করেছেন এবং মার্শাল ল'র সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে দাবি করছেন।
ইউন সুক ইউল সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
২০২২ সালে, রাজনীতিতে নতুন আগত নেতা ইউন সুক ইউল দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জয়ী হন। কিন্তু দ্রুতই তিনি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন, যার বেশিরভাগ ছিল তার স্ত্রী কিম কিওন হি-কে নিয়ে। ইউনের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি এক পাদ্রির কাছ থেকে ডিওর ব্র্যান্ডের লাক্সারি হ্যান্ডব্যাগ গ্রহণ করেছেন।
গত এপ্রিলের পার্লামেন্টারি নির্বাচনে বিরোধী দল ভূমিধ্বস জয় পাওয়ার পর, ইউন কার্যত লেম ডাক কিংবা দুর্বল প্রেসিডেন্টে পরিণত হন, যার ক্ষমতা বলতে ছিল কেবল বিল ভেটো দেয়া।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ইউন মার্শাল ল'র ঘোষণা দেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে আজকের গ্রেপ্তার প্রচেষ্টায় রূপ নিয়েছে।